বিশ্বকাপ যেন খেলোয়াড় খোঁজার জায়গা। বিশ্বকাপে ভালো করে অনেক খেলোয়াড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্বকাপ শেষ? রবিঠাকুরের ভাষায় বলাই যায়, বিশ্বকাপ শেষ হইয়াও হইল না শেষ! তার কারণ দলবদলের মৌসুম। বিশ্বকাপে ভালো করা খেলোয়াড়দের দিকে আলাদা নজর থাকে প্রতিটি দলের। আবার বিশ্বকাপ খেলোয়াড়দের ক্লাবগুলোর জন্য শাপে বরও হতে পারে। খেলোয়াড়েরা যেমন নিজেদের দাম বাড়িয়ে নেন, তেমনি বিশ্বকাপে ভালো করা খেলোয়াড়দের বেচে ক্লাবগুলো নিজেদের লাভও তুলে নিতে পারে। বিশ্বকাপের ভালো পারফরম্যান্স যেসব খেলোয়াড়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, আসুন, তাঁদের সমন্ধে জেনে নিই—
এডেন হ্যাজার্ড : রিয়াল মাদ্রিদে হ্যাজার্ডের পা রাখার আলোচনা কম সময় ধরে চলছে না। দর-কষাকষিতে চেলসির সঙ্গে একমত হতে পারছিল না রিয়াল মাদ্রিদ। এর মধ্যেই বিশ্বকাপে বেলজিয়ামকে সেমিফাইনালে তুলেছেন হ্যাজার্ড। নিজে করেছেন তিন গোল, দুই ‘অ্যাসিস্ট’। আর বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ‘ড্রিবল’। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শূন্যস্থান পূরণে এডেন হ্যাজার্ডকে বিবেচনা করছে রিয়াল। এদিকে হ্যাজার্ড বিশ্বকাপে দারুণ খেলে নিজের দামটা বাড়িয়ে নিয়েছেন অনেক।
থমাস মুনিয়ে : বিশ্বকাপের মাঠে থমার মুনিয়ে ছিল বেলজিয়ামের জন্য সবচেয়ে বড় টোটকা। ফ্রান্সের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি দরকার পড়েছে মুনিয়েকেই। এক গোল ও দুই ‘অ্যাসিস্ট’ করা মুনিয়েকে এখনই কিনতে চাইছে না বড় কোনো দল। তার কারণ বোধ হয় বিশ্বকাপে এই বেলজিয়ানের অসাধারণ পারফরম্যান্স। কারণ, এখন তাঁকে কিনতে হলে বড় অঙ্কের খরচ করতে হবে ক্লাবগুলোকে।
দেনিস চেরিশেভ : রাশিয়ার বিশ্বকাপ একাদশে তাঁর নিয়মিত হওয়ার কথা ছিল না। অথচ অ্যালান জাগোয়েভের ইনজুরি চেরিশেভের জায়গা পাকা করে দেয় দলে। চেরিশেভ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন বিশ্বকাপে চার গোল করে। এতে তাঁর দামও বেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে! চেরিশেভ এখন ভিলারিয়ালের কাছে সোনার ডিমপাড়া রাজহাঁস। তাকে কিনতে হলে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হবে যেকোনো দলকে।
হ্যারি ম্যাগুইয়ার : ইংল্যান্ডে এখন হ্যারি ম্যাগুইয়ারের মাথার দাম কত হবে বলতে পারেন? হেডে গোল দিয়ে ইংল্যান্ডকে সেমি পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন দলকে। এই ডিফেন্ডারের জন্য লেস্টার সিটিকে দিতে হয়েছিল মাত্র ১৭ মিলিয়ন। তার দাম এই মৌসুমে যে ৫০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
ইয়েরি মিনা : ম্যাগুইয়ারের মতো সেট পিস থেকে এক আতঙ্কের নাম ছিলেন ইয়েরি মিনা। ৩ গোল করে কলম্বিয়াকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের দৌড়ে রেখেছিলেন। বার্সেলোনা থেকে তাঁকে এখন যেকোনো দলকে বড় অঙ্কের চেক লিখতে হবে।
বেঞ্জামিন পাভার : দুই বছর আগেও তাঁকে ইউরো দেখতে হয়েছে গ্যালারিতে কিংবা টিভি সেটের সামনে। কিন্তু সেই বেঞ্জামিন পাভার এখন বিশ্বকাপজয়ী! এমনকি প্রতিটি ম্যাচ খেলেই জিতেছেন। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাঁর গোলটা বিশ্বকাপের সেরা গোল হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বকাপের পর পাভারকে কোনো দল কিনতে চাইলে বিশাল অঙ্কের অর্থই খরচ করতে হবে।
দোমায়গ ভিদা : বিশ্বকাপের আগে অনেকটা বাতিল মাল হিসেবেই গণ্য ছিলেন। কোনো দাম ছাড়াই ছিলেন বেসিকতাসে। এরপর বিশ্বকাপে টানা ৩ ম্যাচে ১২০ মিনিট খেলেছেন ভিদা। ক্রোয়াট রক্ষণকে জমাটও রেখেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তাঁর ভালো পারফরম্যান্স দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বেসিকতাসের লাভও হচ্ছে প্রচুর। ফ্রিতে কেনা কোনো খেলোয়াড়কে এত দামে বিক্রি করতে পারাও কম না!
সিমে ভরসালিয়োকো : নিজের ক্লাবেই তাঁর জায়গা নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার জার্সিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স তাঁর দামকে আকাশচুম্বী করতে সময় নেয়নি। ডান পাশ দিয়ে প্রতিটি আক্রমণে অংশ নেওয়ার সঙ্গে অসাধারণ ‘স্ট্যামিনা’ আর ‘ওয়ার্ক রেট’—সব মিলিয়ে বড় দলের চোখে পড়তে ভরসালিয়োকোর সময় লাগবে না। আর সে রকম কিছু হলে ভরসালিয়োকোর দাম বেড়ে আকাশছোঁয়া হওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার।
ইভান পেরিসিচ : ক্রোয়েশিয়া আক্রমণভাগে বিস্ময়ের নাম ছিল পেরিসিচ। নিয়মিত খেলা না দেখলে তাঁকে চেনার কথা না অনেকেরই। তবে পেরিসিচ কিন্তু গত ৩ মৌসুমেই ধারাবাহিক। ইন্টার মিলান থেকে তাঁকে কেনার গুঞ্জনে বড় দল বলতে ম্যানচেস্টারের ইউনাইটেডের কথাই আলোচিত হচ্ছে। আর বিশ্বকাপে তাঁর পারফরম্যান্সের জোরে দামটাও বেড়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য।